গত এক দশকে এই নিয়ে চতুর্থ বার! NITISH KUMAR কে নিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী রবিবার ফের বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে সপ্তম বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নীতীশ কুমার৷ তাঁর সঙ্গেই বিহারের নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারে বিজেপি নেতা সুশীল মোদী।
নীতীশের শিবির বদলের জল্পনার মধ্যেই শোনা গিয়েছিল, হয়তো বা বিধানসভা ভেঙে দিয়ে লোকসভা ভোটের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে বিহারে৷ কিন্তু সেই সম্ভাবনা নেই বলেই সূত্রের দাবি৷ আগামী বছরই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ ফলে ভোট নিয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতিই নিয়েছে দু পক্ষ৷
রাজ্য বিজেপি প্রধান সম্রাট চৌধুরী এবং প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী সহ অন্যান্য সিনিয়র নেতারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করেছেন। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত পেলেই বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে ফের এনডিএ-তে যোগ দেবেন নীতীশ। তবে জাতীয় স্তরের বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না
একজন বিজেপি নেতা জানিয়েছেন,”এটা স্পষ্ট যে জেডি(ইউ) এনডিএ-তে পুনরায় যোগদানের জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছে, যা রাজ্য ইউনিটের বেশিরভাগ নেতারা তীব্র বিরোধিতা করেছেন।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে রাজ্য ইউনিট বিশ্বাস করে যে নীতীশ কুমার এবং লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন জেডি (ইউ)-আরজেডি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় এসেছে বিজেপির, প্রমাণ করে যে তারা উভয়কেই পরাজিত করতে সক্ষম।
তবে ফের বিজেপির শরণাপন্ন হওয়ার বেশ কিছু মাশুল গুনতে হচ্ছে নীতীশকে৷ প্রথমত, মন্ত্রিসভায় বিজেপি বিধায়কদের জায়গা করে দিতে দু দলের প্রত্যেক চার জন বিধায়ক পিছু একজন করে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এই ফর্মুলা মানলে মন্ত্রিসভায় বিজেপি-র প্রতিনিধিত্বই বেশি থাকবে৷ শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনেও ২০১৯ সালের তুলনায় জেডিইউ-কে কম আসন ছাড়বে বিজেপি৷ ২০১৯-এ বিহারে ১৭টি লোকসভা আসনে লড়ে ১৬টিতেই জয়ী হয় নীতীশের দল৷ সেখানে এবার বিজেপি নীতীশের দলের জন্য খুব বেশি হলে ১২ থেকে ১৫টি আসন ছাড়তে পারে৷
২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। কেন আবার তিনি বিজেপির সঙ্গী হতে চাইছেন?
সূত্রের মতে,৭৯ বিধায়কদের দল আরজেডি বেশ কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাপ দিচ্ছে তাঁকে। লালু চান তাঁর পুত্র তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর হাতে পটনার কুর্সি তুলে দিতে। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ বিধায়কের সমর্থন। নীতীশের দলের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৪৫। ফলে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে হলে বিজেপির ৭৮ বিধায়কের সমর্থন তাঁর প্রয়োজন।
বিহার বিধানসভার যা অবস্থা তাতে কোনও দলের হাতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ গত বিধানসভা ফলের নিরিখে বিহারের ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় বিজেপি-র হাতে রয়েছে ৮২টি আসন৷ আরজেডি-র বিধায়ক সংখ্যা ৭৯৷ সেখানে নীতীশের জেডিইউ-এর বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৪৫৷ কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ১৯ জন বিধায়ক৷ বামেদের বিধায়ক সংখ্যা ১২৷
লোকসভার আগে নীতীশের এনডিএ অন্তর্ভুক্তিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ কোনও আপত্তি নেই। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ফের এক বার নীতীশের হাত ধরতে সমস্যা নেই। কারণ তাঁরা মনে করেন, এতে ওই রাজ্যে দলের ফল ভাল হবে। যদিও সম্রাট চৌধুরী, গিরিরাজ সিংহের মতো বিহার বিজেপির কট্টর নেতারা নীতীশের অতীত বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাঁকে এনডিএ-তে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু লোকসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে তাতে বেশি আমল দিতে নারাজ মোদী-শাহেরা। ২০১৩ থেকে এই নিয়ে চার বার তিনি শিবির বদল করবেন৷ কখনও তিনি এনডিএ-র শরিক হয়েছেন, কখনও আবার মহাজোটে নাম লিখিয়েছেন৷ কিন্তু শিবির বদল করলেও নিজের মুখ্যমন্ত্রী পদটি ছাড়েননি নীতীশ ৷ নীতীশের এই পদক্ষেপে ভোটের আগেই ইন্ডিয়ার কফিনে শেষ পেরেক পড়ে গেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে বিজেপির সঙ্গে নীতীশের হাত মেলানোর সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করা হচ্ছে।